মোট পৃষ্ঠাদর্শন

শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৩

চোর

১.
হলের মাঠে একটা চোরকে পেটানো হচ্ছে সমানে। সিনিয়র ব্যাচের রাশেদ ভাই বেশ আগ্রহের সাথে কাজটা করে যাচ্ছেন। অন্য ব্যাচের ছেলেরাও চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। হলে চুরির ঘটনা নতুন কিছু না। দুই দিন আগেও হার্ডডিস্ক আর সিপিইউ চুরির মত ঘটনা ঘটেছে। তার আগের সপ্তাহে মোবাইলও চুরি গেছে বেশ কয়েকটা। কিন্তু চোরটাকে ধরা সম্ভব হয় নি এতদিন। ব্যাটাকে আজ হাতেনাতে ধরা গেছে অনেক কষ্টে। খুব সহজে রেহাই পাবে বলে মনে হয় না। রাশেদ ভাই মোটা একটা ডান্ডা দিয়ে পিটিয়ে যাচ্ছেন অনবরত। হাত পা ফুলে গেছে চোরটার। কিন্তু রক্ত বের হওয়ার কোন নাম গন্ধ নাই। জুনিয়র ব্যাচের ছেলেগুলো বিরক্ত হয় ভীষণ। এভাবে মেরে কি লাভ? হারামজাদার হাত পা ভেঙে দেয়া দরকার !  আসিফ নামের একটা ছেলে শার্টের হাতা গুটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসে, "ভাই, শুয়োরের বাচ্চার মাথায় দুইটা বাড়ি দেন, ঝামেলা শেষ"। রাশেদ ভাইয়ের রক্ত গরম হয়ে যায় আরো। এবার হাত আর পায়ের গিরায় মারতে থাকেন সজোরে। চোরটা আর্তনাদ করে উঠে, "বাবাগো", "মাগো" বলে মূর্ছা যায় বারবার। অবশ্য এই শিক্ষিত, ভদ্র সমাজের কেউ সেটা গায়ে মাখে না।

দুপুরের গনগনে সূর্যটাও একসময় মাথার উপর এসে থমকে দাঁড়ায়। ততক্ষনে চোরটার মাথা ফেটে বেশ কয়েকবার রক্ত ঝরেছে, আবার শুকিয়েও গেছে। চারটা হাত পা-ই সম্ভবত ভেঙে দেয়া হয়েছে, কোনটাই অবশিষ্ট থাকেনি আর। মুখ দিয়ে ক্রমাগত ফেনা বের হচ্ছে বেচারার, আগের মত আর চিৎকার চেঁচামেচিও করছে না। একেবারে নিথর হয়ে পড়ে আছে ঘাসের উপর। রাশেদ ভাই থামলেন অনেকক্ষন পর। ডান্ডাটা ছুড়ে ফেললেন সামনের দিকে। তারপর পায়ের স্যান্ডেলটা মেঝেতে ঘষে একটা বিশ্রী শব্দ করতে করতে হলের ডাইনিংয়ে ঢুকলেন। অনেকদিন পর নিজেকে ভীষণ সাহসী মনে হয় তার। একটা আত্মতুষ্টির অনুভূতিও হয় ভেতরে ভেতরে। কিন্তু সেটা আর বেশিক্ষন থাকে না, মুরগীর পিস্‌টা দেখে মেজাজ বিগড়ে যায় ভীষণ। অন্যদিন হলে চুপচাপ খেয়ে নিতেন। কিন্তু আজকের ব্যাপারটা আলাদা। আজকে তাই নুরু ভাইকে ডাকলেন চিৎকার করে। তারপর বেশ একটা ঝাড়ি দিলেন। মাগনা তো আর খান না। মাসে মাসে এতগুলা টাকা দিতে হয়। মুরগীর এইরকম পিস্‌ দেখলে মেজাজ তো একটু খারাপ হতেই পারে !

বিকেলের দিকে খবরটা হলে আসল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে চোরটা। খবরটা যখন হলে আসে তখন সবার খারাপ লাগতে থাকে একটু একটু। এতটা না মারলেও হয়ত চলত ! কত আর বয়স হবে বেচারার ? বাইশ তেইশ হবে হয়ত ! নিশ্চয়ই খুব অভাবে পড়ে কাজটা করতে গেছে। গত দুইদিন ধরে হয়ত কিছুই খায়নি। কিংবা কে জানে, ছোট বোনটার বিয়ের জন্য হয়ত অনেকগুলো টাকা দরকার ছিল ! সেটা জোগাড়ের জন্যই হয়ত কাজটা করেছে। রাশেদ ভাইয়ের অবশ্য তেমন কোন ভাবান্তর হয় না। এইসব ছোটলোক দুনিয়া থেকে চলে গেলেই ভালো। দুনিয়ার মানুষগুলো ভালো থাকে তাহলে ! হলের গেইটে দাঁড়িয়ে মাঝবয়সী এক মহিলা কাঁদছিলেন অনেকক্ষন ধরে। সম্ভবত চোরটার মা। সেই কান্না যে কারো ভেতরটা ভেঙে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। যে কারো চোখে দু'ফোটা অশ্রু আনার জন্য যথেষ্ট। আর তাই একটু আগেও যে ছেলেগুলো অমানুষিকভাবে পেটাচ্ছিল চোরটাকে, তারাও শার্টের হাতায় চোখদুটো মুছে নিলো। আসিফ নামের যে ছেলেটা চোরটার মাথায় একটা বাড়ি দিয়ে সব ঝামেলা শেষ করে দিতে চেয়েছিল, সেও পকেট থেকে দশ টাকার একটা ছেঁড়া নোট বের করে সামনে ছুড়ে দিলো। তারপর সদ্য কেনা সিগারেটটার ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বেরিয়ে গেল।  

২.
প্রকৌশলবিদ্যা পাশ করার পর রাশেদ ভাইয়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। এতদিনের যত স্বপ্ন, সব চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল একসাথে। দক্ষিনমুখী দোতলা একটা বাড়ির স্বপ্ন, যে বাড়িটার সামনে ঘাসের একটা বিশাল লন থাকবে। আর সাদা ধবধবে দুটো কুকুরছানা সেখানে ঘুরে বেড়াবে সারাদিন। বিশাল একটা পাজেরো গাড়ি থাকবে বাড়ির সামনে। আর একটা সুইমিং পুল। একটা টেনিস কোর্টও অবশ্য থাকা দরকার। কিন্তু চাকরীর বাজারের যে অবস্থা, তাতে এই স্বপ্নগুলো পূরনের জন্য অন্তত আরো একশো বছর বাঁচা দরকার। ইউরোপ আম্রিকা যাবার ইচ্ছাও রাশেদ ভাইয়ের কোনকালে ছিল না। আর তাই অনেক ভেবেচিন্তে শেষপর্যন্ত একটা উপায় বের করলেন। দেশের সেবা আর নিজের সেবা করার ব্রত নিয়ে দেশে থেকে গেলেন। উগান্ডার প্রেসিডেন্ট আর সোমালিয়ার রাজধানীর নাম মুখস্থ করে রোড্‌স এন্ড হাইওয়েজ ডিপার্টমেন্টে জয়েন করলেন। ভাগ্য ভালো হলে তিন চার বছরেই কোটিপতি হওয়া যাবে হয়ত। আর ভাগ্য যদি সুপ্রসন্ন না হয় ? সেক্ষেত্রেও পাঁচ বছরের বেশি সময় লাগার কথা না। দেশের সেবা আর নিজের সেবা করার এমন সুযোগ জীবনে দুইবার আসে না।  

সরকারী অফিসগুলোর কপর্দকশূন্য অবস্থা দেখে ভেতরটা বোঝার উপায় নেই কোনো। এখানকার ভিখারীসদৃশ মানুষগুলোরও কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। সেটা অবশ্য বাইরে থেকে বোঝা যায় না। রাশেদ ভাইয়ের পোস্টিং হয় যেখানে, সে জায়গাটা আরো বেশি জীর্ণ-শীর্ণ। একেবারে অজপাড়াগাঁয়ে। অপরিষ্কার একটা টেবিল, ভাঙাচোরা একটা চেয়ার আর মাথার উপর অলস ভঙিতে ঘুরতে থাকা ফ্যানসহ একটা নোংরা রুম দেয়া হল তাকে। ভালো লাগার মত একটা কিছুও সেখানে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তারপরও কাঁচা টাকার গন্ধে সবকিছু মেনে নিলেন রাশেদ ভাই। ভীষণ মনোযোগ দিয়ে দেশের সেবা শুরু করলেন।

অল্প কদিনের ভেতর অফিসের কেরানী আবদুল করিমের সাথে বেশ খাতির জমিয়ে ফেললেন রাশেদ ভাই। এক পড়ন্ত বিকেলে, অফিস ছুটির ঠিক আগ মুহূর্তে, দুজনে চা খেতে খেতে দেশ নিয়ে আলোচনা করলেন অনেক্ষন। "দেশটা রসাতলে যাচ্ছে"- এই ধরনের ফালতু কথাবার্তা শুনলে মাথায় রক্ত উঠে যায় করিম সাহেবের। "আরে বাবা, দেশ রসাতলে যাবে কেনো ? আমি ভালো আছি, আপনি ভালো আছেন, আপনার আগে যে ইন্জিনিয়ার সাহেব ছিলেন, উনিও মাশাল্লা ভালো আছেন। দেশ তাহলে রসাতলে যায় কেম্‌নে?" করিম সাহেবের কথায় রাশেদ ভাই অভিভূত হয়ে যান একদম। এত বিচক্ষন মানুষ আগে কোনদিন দেখেন নি তিনি। কি অসাধারন ফিলোসফি ! সত্যিই তো, আমরা ভালো থাকা মানেই তো দেশের ভালো থাকা। এই সহজ জিনিসটাও এতদিনে মাথায় ঢুকল না ! করিম সাহেবের বিপুল ধন সম্পদের কথাও একদিন জানা হয়ে গেল রাশেদ ভাইয়ের। উত্তরায় তার ছয়তলা একটা বাড়ি আছে। মহাখালীতেও চারতলা একটা বাড়ির কাজ চলছে। আর গাজীপুরের দিকে জমি আছে বেশ কয়েক বিঘা। তবে  সবচাইতে অবাক করা ব্যাপার হল, এই ক্লাস এইট পাশ মানুষটার দুই ছেলেমেয়েই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ছে ! "ছেলেটারে ইন্জিনিয়ার আর মেয়েটারে ডাক্তার বানামু স্যার, দোয়া রাইখেন "- রাশেদ ভাই চুপ থাকেন কিছুক্ষন। এরকমটা আশা করেননি তিনি। অবশ্য এই দেশে সবি সম্ভব। রোড্‌স এন্ড হাইওয়েজ এর একজন পিয়ন তার ছেলেমেয়েকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াবে, সেটাই স্বাভাবিক !

দেশের সেবা করাটা এত সহজ কিছু হবে সেটা জানা ছিল না রাশেদ ভাইয়ের। হালকা পাতলা কিছু টেকনিক্যাল কাজ ছাড়া সারাদিন তেমন কিছু করার থাকে না আর। কোন একটা প্রজেক্ট পাশ হবার পর নিয়মমত টেন্ডার কল করা হয়। অবশ্য কোন্‌ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটা করবে, সেটা আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। তারপর যখন প্রজেক্টের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা এসে পৌঁছায়, সেই টাকাটা কয়েক ভাগ করা হয়। একটা ভাগ যায় এমপি সাহেবের পকেটে। একটা ভাগ থাকে ইন্জিনিয়ার সাহেবদের জন্য। অ্যাডমিনিস্ট্রেশন আর পুলিশকেও ম্যানেজ করার ব্যাপার আছে। করিম সাহেবদের জন্যও ছোট একটা ভাগ থাকে। সেই ভাগের টাকাও কম না, ছেলেমেয়েদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ানোর জন্য যথেষ্ট। এতকিছুর পরেও সামান্য যে কয়টা টাকা থাকে, সেটা দিয়ে কোনরকমে একটা রাস্তা বানানো হয়। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই রাস্তাটা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয় আবার। দেশের বেকুব বান্দারা কয়েকদিন হা-হুতাশ করে এটা নিয়ে, তারপর ভুলে যায় সব। পুরো ব্যাপারটা একটা সিস্টেমের মধ্যে এসে গেছে। একেবারে সাজানো গোছানো। করিম সাহেব ঠিকি বলেছিলেন, এই দেশের বাতাসে টাকা উড়ে আসলে, সেটা ধরতে জানতে হয় শুধু।

বছর আটেক পর রাশেদ ভাইয়ের বেশ ভালোরকমের একটা প্রমোশন হয়ে যায়। সরকারী বাড়ি গাড়ি পেয়ে যান একসাথে। এটা অবশ্য তেমন কিছুই না। ততদিনে যে পরিমান টাকা কামানো গেছে, সেটা দিয়ে একটা রাজপ্রাসাদ বানানো যাবে রীতিমত। বিলাশবহুল একটা গাড়িও কেনা যাবে। অবশ্য রাজপ্রাসাদ বানানোর কিংবা বিলাসবহুল গাড়ি কেনার কোন ইচ্ছা আপাতত রাশেদ ভাইয়ের নেই। নানারকমের ঝামেলা আছে এই কাজে। তারচাইতে সরকারী জিনিস ব্যবহার করাই ভালো। গাড়িটার সাথে আবার ফ্রিতে একটা ড্রাইভারও পাওয়া গেছে। প্রতি সপ্তাহে এই গাড়ি নিয়ে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় যাওয়া হয় বেশ কয়েকবার। যাওয়ার সময় মায়ের জন্য কার্টনভর্তি করে মাল্টা, আপেল, কমলা, আর হরলিকস্‌ নিয়ে যান রাশেদ ভাই। তবে সবচাইতে মজার ব্যাপার হল, এজন্য তার কোন টাকা খরচ করতে হয় না। "সরকারী কাজে তেলবাবদ খরচ"- এর লিস্টে চলে যায় সব। অনেকদিন আগে একটা মুভি দেখেছিলেন রাশেদ ভাই, "লাইফ ইজ বিউটিফুল", সেই মুভির কিছুই বুঝেন নি তখন। কিন্তু এখন বুঝতে পারেন সব। আসলেই, "লাইফ ইজ বিউটিফুল"।

মাদারীপুর থেকে ঢাকা যাবার সময় একবার ভীষণ বিপদে পড়ে যান রাশেদ ভাই। ফেরী পারাপারের ভাড়া দিতে গিয়ে দেখলেন, পকেটে নগদ টাকা একটাও নেই। গাড়ির ড্রাইভার সালামতের পকেটও শূন্য ছিল। গাড়ি থেকে নেমে একটা সিগারেট ধরিয়ে রাশেদ ভাই ভাবতে লাগলেন, কি করা যায়। সালামত এমন সময় মাথা চুলকাতে চুলকাতে সামনে এসে দাড়ায়-
"স্যার, একটা কথা বলতাম, যদি কিছু মনে না করেন........"
"হুমম্‌, বলো"।
"স্যার, বলতেছিলাম কি, অল্প কিছু অক্টেন বেচতে পারলে বেশ কিছু টাকা পাওয়া যাইত........"।

রাশেদ ভাই চমকে উঠেন বুদ্ধিটা শুনে। সামান্য একটা ড্রাইভারের কাছ থেকে এত অসাধারন একটা আইডিয়া পাবেন, সেটা বুঝতে পারেননি আগে। শুধু ফেরী পারাপারের জন্য না, এখন থেকে আইডিয়াটা অন্য কাজেও লাগানো যাবে। বাজারে অক্টেনের দামটাও বেশ ভালো। "তুমি অক্টেন বেচার ব্যবস্থা কর"। ইন্জিনিয়ার সাহেবের কথায় সালামত দ্রুত কাজে নেমে পড়ে। অক্টেন বেচার মত জানাশোনা লোক তার আছে। এই কাজ সে আগেও অনেকবার করেছে। আগের ইন্জিনিয়ার সাহেবরাও তাকে দিয়ে অক্টেন বেচিয়েছে অনেকবার। তবে এত সহজে কেউ রাজি হয় নি আগে। শুরুতে একটু নাটক-ফাটক করত সবাই। তারপর লাইনে চলে আসত। কিন্তু এই ইন্জিনিয়ার সাহেব অন্যরকম, নাটক ফাটকের ধার ধারে না। অনেক বড় ইন্জিনিয়ার হবে হয়ত ! সালামত মনে মনে শঙ্কিত হয় কিছুটা, এই লোক সুযোগ পেলে দেশের একদলা মাটিও রাখবে না, সব বেচে দিবে।

৩.
সামিরা ভাবীর কথা একবারো বলা হয়নি এখনো। রোড্‌স এন্ড হাইওয়েজ এর ইন্জিনিয়ার, আমাদের রাশেদ ভাইয়ের বৌ সামিরা ভাবী। ভীষণ রকমের জেদী আর বদমেজাজী। ধনীর দুলালী হলে যা হয় আর কি ! সচিব সাহেবের এই কন্যা সাজুগুজু করতে পছন্দ করেন খুব। দিনের বেশিরভাগ সময় এসি রুমের ভেতর স্টার প্লাসের সামনে বসে থাকেন ভাবী। বাসার কাজ করার জন্য লোকের অভাব নেই বাড়িতে। রান্নাবান্না, ঘর-দোর মোছা, আর বাগান পরিষ্কারের জন্য বাড়িভর্তি কাজের লোক। অবশ্য তাদের একজনকেও দেখতে পারেন না ভাবী। সবকয়টা ফাঁকিবাজ। শুধু চুরির ধান্ধায় থাকে। শাহীনা নামের কাজের মেয়েটাকে তো আজকে হাতেনাতে ধরেও ফেলেছেন ভাবী। ভাবীর বড় ভাই আমেরিকা থেকে আসার সময় অনেকগুলো দামী পেস্ট্রি কেক নিয়ে এসেছিলেন এবার। আর এই হারামজাদী চুরি করে খাচ্ছিল সেগুলো। শাহীনার চুল টেনে ধরে একটা লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি অনেক্ষন মারেন ভাবী। গত সপ্তাহে ভাবীর খুব দামি একটা ঘড়িও চুরি গেছে। ভাবী নিশ্চিত, এই ছোটলোকের বাচ্চাই নিয়েছে সেটা। কিন্তু ঘড়ি চুরির কথা স্বীকার করে না শাহীনা। ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয় তার, আর একসময় সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়। এবার ভাবী ভয় পেয়ে যান সত্যি সত্যি। মরে গেল নাকি আবার ? রাশেদ ভাইকে ফোন করে খুলে বলেন সবকিছু। "আধঘন্টার মধ্যেই পুলিশ নিয়ে আসছি আমি "। রাশেদ ভাই চিন্তা করতে মানা করেন, আর এইসব ছোটলোক, চোর বাটপারকে অভিশাপ দিতে থাকেন অনবরত।

শাহীনার যখন জ্ঞান ফিরল, তখন সে দেখল তার চারপাশে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। স্যার, আপা আর বাড়ির অন্য কাজের লোকেরা। দুইজন পুলিশও দাঁড়িয়ে আছে একটু দূরে। শাহীনার কাঁটা ঠোটের রক্ত শুকিয়ে গেছে ততক্ষনে। কিন্তু শরীরটা দুর্বল লাগছে খুব। সে উঠে দাঁড়ায় অনেক কষ্টে। এই পুলিশদের সাথেই এখন তার থানায় যাওয়া লাগবে। আর কিছু করার নেই তার। শাহীনার মাথায় হঠাৎ খুব অদ্ভুত একটা চিন্তা আসে, মনে মনে ঠিক করে নেয় সে, নিজের ছেলেকেও একদিন চোর বানাবে। তবে তার আগে কলম ধরাটা শিখিয়ে দেবে শুধু, যেন মার খেতে না হয় আর !  

 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন